--দেশে বোরো চাষ কমছে --
বোরোর চাষ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে খাদ্যনিরাপত্তায় প্রভাব
ফেলতে পারে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) দেশের ১১টি জেলার
বোরো ধান চাষ নিয়ে করা একটি জরিপ চালিয়ে এ তথ্য দিয়েছে। ‘খাদ্যে
স্বয়ংসম্পূর্ণতার ওপর ধানের জমি হ্রাসের কারণ বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ওই জরিপ
প্রতিবেদনে সরকারি ধান সংগ্রহ অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও তোলা
হয়েছে।
আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ৩ মে দেশের আটটি জেলার ধানের দর প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, ময়মনসিংহের নান্দাইল বাজারে বোরো মৌসুমের মোটা ধান প্রতি মণ ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর অন্যান্য জেলায় বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৮০ টাকা মণ দরে। আর সরকারের চারটি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এ বছর এক মণ বা ৪০ কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ৮২৮ টাকা। সেই হিসাবে কৃষকেরা প্রতি মণ ধান বিক্রি করে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত লোকসান দিচ্ছেন।
ব্রির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ৪৮ দশমিক ৪৬ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন চাল। এ বছর বোরো চাষ হয়েছে ৪৬ দশমিক ৬১ লাখ হেক্টর জমিতে। আর এবার উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ৭ লাখ ১ হাজার টন কম হবে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি।
কৃষক কেন ধানের এ দাম পাচ্ছেন না ও ধান উৎপাদনে তাঁরা কেন উৎসাহ হারাচ্ছেন—এর একটি বিশ্লেষণ ব্রির জরিপে উঠে এসেছে। তাতে তারা কৃষকের ধান চাষে নিরুৎসাহের প্রধান কারণ বিগত বছরগুলোতে বোরো ধানের কম দামের কথা উল্লেখ করেছে। আমন ও আউশ মৌসুমের তুলনায় বোরো মৌসুমে বাজারে ধানের অত্যধিক জোগান থাকায় বাজারদর নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কষ্টকর। ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে প্রকৃত কৃষক সরকারের ধার্য করা ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য সরকার চালের চেয়ে বেশি পরিমাণে ধান সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সরবরাহ করা তালিকা অনুযায়ী খাদ্য অধিদপ্তর প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করবে। তিনি বলেন, কৃষকেরা যাতে খাদ্য বিভাগের গুদামে ধান নিয়ে যেতে পারেন, সে জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থাগুলোরও উচিত কৃষকের স্বার্থে এ বিষয়গুলো বেশি করে তুলে ধরা।
প্রান্তিক ও ক্ষুদ্রÊকৃষকদের ধান-চাল সংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে সংগ্রহ অভিযানকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছে ব্রি। মধ্যস্বত্বভোগী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এড়িয়ে এ অভিযানকে কৃষকের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরাসরি কৃষি খামার থেকে ধান-চাল সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ব্রির এ জরিপের ফলাফল সম্পর্কে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফয়েজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তালিকা অনুসরণ করেই কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করছেন। প্রতি জেলায় সংগ্রহ নিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। ফলে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনাতেই এবার কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।
চাষ কমছে: ব্রির কৃষি অর্থনীতি বিভাগ দেশের ১১টি জেলার ওপর জরিপ করে। তাতে দেখা গেছে, ২০১০ সালের পর থেকে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। আর ধান বিক্রি করে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রদত্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, নওগাঁ, রংপুর, যশোর, বগুড়া, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও কিশোরগঞ্জ জেলায় যথাক্রমে শতকরা ১১.২৯, ৬.২৫, ৬.১৭, ৫.৫, ৫.২৩, ২.৪, ১.৮২, ১.১৯, ১.১, ০.৯৫ ও ০.৮৭ হারে বোরোর আবাদ কমেছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ডিএএম) হিসাবে, গত বছর বোরো ধানে কৃষকেরা এক কেজি মোটা ধানের দাম পেয়েছেন গড়ে ১৬ টাকা ৮৮ পয়সা। আর মাঝারি আকারের ধানের দাম পেয়েছেন গড়ে ১৮ টাকা ৪৮ পয়সা। সরকারি হিসাবে, গত মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন খরচ ছিল কেজিপ্রতি ২০ টাকা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কাজী সাহাবউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এবার সরকার ছয় লাখ টন ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনবে, এটা ভালো উদ্যোগ। খেয়াল রাখতে হবে, তা যাতে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
No comments:
Post a Comment