চালতা একটি অপ্রকৃত ফল
চালতা একটি অপ্রকৃত ফল। এ ফলের যে অংশটা খাওয়া হয় তা আসলে ফুলের বৃতি।
ভক্ষণযোগ্য অংশটা হলো পরিণত বৃতির মাংসল পরত। চালতা ফল বাঁকানো নলের মতো
এবং এতে চটচটে কষ বা রস থাকে। চালতা ফলের ইংরেজি নাম Elephant apple এবং এর
বৈজ্ঞানিক নাম Dillenia indica। বাংলাদেশের স্থানবিশেষে এই ফল চালিতা বা
চাইলতা নামেও পরিচিত। অসমীয়া ভাষায় চালতাকে বলে ঔটেঙা। চালতা ফল দিয়ে আচার
তৈরি করা যায়। কিছু কিছু এলাকায় চালতা দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়।
পাকা চালতা ভর্তা মসলা দিয়ে মাখিয়েও খাওয়া যায়। এক অর্থে চালতা একটি
অবহেলিত ফল হলেও এতে আছে ক্যালসিয়াম, শর্করা, আমিষের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান।
এ ছাড়াও আছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, থায়ামিন ও
রিবোফ্লাবিন। তাই চালতা শরীরে যেমন রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে, তেমনি
পুষ্টি পূরণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। আসুন জেনে নেয়া যাক এর বিভিন্ন
পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে
উপকারীতা :-
চালতা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সির ভালো উৎস।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এই ফল স্কার্ভি ও লিভারের রোগ প্রতিরোধ
করে। চালতায় রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা জরায়ু ও স্তন
ক্যানসার প্রতিরোধ করে। এর ভেতর থাকা আঁশ বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
চালতায় উপস্থিত আয়রন রক্তের লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সহায়তা করে। রক্তের
সংবহন ঠিক রাখে। চালতার বিভিন্ন উপাদান হার্টের নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা
করে। চালতা পেটের নানা অসুখ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডায়রিয়া সারাতে কাঁচা
চালতার রসের তুলনা নেই। রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
রাখতে সহায়তা করে চালতা। ঠান্ডা ও কাশির জন্য পাকা চালতার রস চিনি মিশিয়ে
খেলে উপকার পাওয়া যায়। কিডনীর নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে চালতা। বাত
রোগে কচি ছোট ফল বেটে এক গ্লাস ঠান্ড জলে মিশিয়ে খেলে বাতে উপকার হয়। চালতা
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ডায়রিয়া ও বদহজমে চালতা খান, দ্রুত সুস্থ
হয়ে উঠবেন।
অন্ত্রে বাসা বাঁধা কৃমির বিরুদ্ধে লড়ার এক অসাধারণ
ক্ষমতা আছে চালতার। পাকস্থলীতে যাদের আলসার আছে, তাদের জন্য দাওয়াই হতে
পারে চালতা। স্কার্ভি (ভিটামিন সি এর অভাবজনিত একটি রোগ) থেকে সুরক্ষা
পেতেও চালতা খেতে পারেন। হৃদযন্ত্র এবং যকৃৎ ভালো রাখার প্রয়োজনীয় সব
উপাদান আছে চালতায়। এই ফল হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা কমাতেও খেতে পারেন।
কানের যেকোনো সমস্যায়ও চালতা খেতে পারেন।
পাতা ও মূলের উপকারিতা : শুধু ফল নয়, চালতার মূল ও
পাতারও রয়েছে ওষধীগুণ। রক্ত আমাশয় গাছের কচি টাটকা পাতা বেটে তার রস ২০
মিলিলিটার এক কাপ ঠান্ডা জলে মিশিয়ে দিনে দুবার খেলে রোগের উপশম হয়। মচকে
গিয়ে ব্যথা পেলে সেখানে চালতা গাছের মূল ও পাতা পিষে প্রলেপ দিলে ব্যথা কমে
যায়।
রূপ চর্চায় চালতা :- শুধু খাদ্য হিসেবে নয়,
রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও রয়েছে চালতার ব্যবহার। কাঁচা চালতা পানিতে মিশিয়ে
চুলের গোড়ায় নিয়মিত লাগালে চুল পড়া কমে যায়। কাঁচা চালতার রসের সাথে
পেঁয়াজের রস মিশিয়ে সপ্তাহে দুবার চুলের গোড়ায় লাগালে খুশকি দূর হয়ে যাবে।
চালতার রসের সাথে চালের গুঁড়া মিশিয়ে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করলে মরাকোষ
পরিষ্কারের পাশাপাশি ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ও কোমল। চালতার রস টোনার
হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। চালতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে তাতে তুলো ভিজিয়ে
ত্বকে লাগান। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে বলিরেখা পড়া বিলম্বিত করে এই
টোনার। চালতার রসের সাথে চিনির গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকের কালো অংশগুলোতে লাগান।
আঙুল দিয়ে হালকা মাসাজ করুন দশ পনেরো মিনিট। এরপর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত
ব্যবহারে ত্বকের কালচে ভাব দূর হয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment