Sunday, 15 May 2016

- ১১ বছর পর মা-বাবাকে হত্যার দায় স্বীকার ৪ ভাইয়ের-

 

 

১১ বছর পর মা-বাবাকে হত্যার দায় স্বীকার ৪ ভাইয়ের



১৪ মে ২০১৬,শনিবার, ২০:২৩
গাজীপুরে নিখোঁজের প্রায় ১১ বছর পর বাবা, মা ও ভাইকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন চার ভাই। এ ঘটনায় শনিবার চারভাইকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১-এর সদস্যরা। গ্রেফতারকৃতরা হলেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাসন এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোঃ রমজান আলী (৫০), মোঃ বাবুল হোসেন (৩৭), মোঃ আরফান আলী (৩৫), মোঃ আকরাম আলী (৩০)। অভিযানকালে তাদের অপর ভাই আহসান হাবিব (৪৫) পালিয়ে যান।
র‌্যাব জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাসন এলাকার মোহাম্মদ আলী (৬০), তার দ্বিতীয় স্ত্রী চায়না খাতুন (২৫) এবং তাদের ৪ চার বছরের পুত্র সন্তান ইমরান আলী ২০০৫ সালে হঠাৎ করেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। এলাকাবাসী ও স্বজনরা তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিলে মোহাম্মদ আলীর প্রথম পক্ষের সন্তানেরা জানান, তাদের বাবা রাগ করে দ্বিতীয় স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে রংপুর চলে গেছে। পরে জামাতা, কন্যা ও নাতির কোনো খবর না পেয়ে চায়না খাতুনের মা র‌্যাবকে ঘটনা জানান। অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব-১ বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে। নিখোঁজ ওই তিনজনের হদিস না পেয়ে তদন্তের একপর্যায়ে শনিবার সকালে এএসপি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব এর নেতৃত্বে র‌্যাব-১-এর সদসরা গাজীপুর মহানগরীর বাসন এলাকার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই চার ভাইকে আটক করে। অভিযানকালে তাদের অপর ভাই আহসান হাবিব (৪৫) পালিয়ে যান।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র‌্যাবকে জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাসন এলাকার মোহাম্মদ আলী (৬০) রংপুরের চায়না খাতুনকে (২৫) দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর ২০০৫ সালে তাদের বাবা সৎ মা এবং সৎ ভাই মোঃ ইমরানকে (৪) ১০ শতাংশ করে মোট ২০ শতাংশ জমি লিখে দেয়। এনিয়ে বাবা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তাদের ও তাদের মা’র (প্রথম স্ত্রী) প্রায়ই কথা কাটাকাটি লেগে থাকত। জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার সপ্তাহ খানেক পর রাত আনুমানিক ১১টার দিকে মোহাম্মদ আলীর প্রথম স্ত্রীর ৫ ছেলে মোঃ রমজান আলী, আহসান হাবিব, মোঃ বাবুল হোসেন, মোঃ আরফান আলী এবং মোঃ আকরাম আলী তাদের বাবা এবং সৎ মার ঘরে প্রবেশ করে সৎমা ও ভাইকে জমি দেয়ার বিষয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করেন। তাদের বাবা বিষয়টি অস্বীকার করলে বাবা ও প্রথম পক্ষের সন্তানদের মাঝে বাগবিতন্ডা হয়। এসময় মোহাম্মদ আলী প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তানদের জমি দেবে না বলে জানান। এতে উত্তেজিত হয়ে তাদের বাবা মোহাম্মদ আলী ও সৎ মা চায়নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। ঘটনার পর তারা নিহতদের লাশ প্লাষ্টিকের বস্তায় মাটি ভরে লাশের কোমড়ে রশি দিয়ে বেঁধে পার্শ্ববর্তী তুরাগ নদীতে ফেলে দেন। পরে তারা বাড়িতে এসে ওই রাতেই তাদের সৎ ভাই ইমরান আলীকে (৪) হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার সিলেটে নিয়ে যান এবং তাকে সেখানে ফেলে পালিয়ে গাজীপুরে চলে আসে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার সকালে তুরাগ নদীতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি নামিয়ে ব্যাপক তল্লাশী চালিয়েও লাশের দেহবশেষ বা অংশবিশেষ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
র‌্যাব আরো জানায়, এর আগেও সে রাগ করে রংপুর তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ীতে চলে গিয়েছিল তাই প্রতিবেশীরাও কোনো সন্দেহ করেনি। এ ঘটনায় তার পুত্ররা কোনো জিডি বা মামলা করেনি। পরে জামাতা, কন্যা ও নাতির কোনো খবর না পেয়ে চায়না খাতুনের মা গাজীপুরে আসেন। এসময় সে স্থানীয়দের কাছে জানতে পারে তার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। নানা হুমকীর প্রেক্ষাপটে চায়নার মা দীর্ঘ দিনেও জামাতা, মেয়ে ও নাতিক খোঁজে আর ঢাকায় আসেননি। একপর্যায়ে র‌্যাবকে ঘটনা জানান তিনি। এঘটনায় চায়নার মা জয়দেবপুর থানায় জিডি করেছেন।
এদিকে নিখোঁজ ইমরানকে খোঁজার জন্য র‌্যাবের আরেকটি দল সিলেটে শাহজালাল মাজার ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, তবে এখনো তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।




No comments:

Mobile

Pages